বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় হলো ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা, সঠিক নিয়মে ভিসার আবেদন করলে সহজেই ইতালিতে যাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে কাজ করতে যাওয়া ব্যাপারটা সপ্নের মতো এর কারণ হলো ভিসা প্রসেসিং এবং কোম্পানী খুজে পাওয়া। কিন্তু সঠিক ভাবে ভিসার আবেদন করতে পারলে ইতালিতে যাওয়া অনেক সহজ বলে মনে করি। আজকে আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে, এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ার পরে আপনি বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম, সরকারিভাবে ইতালি যাওয়ার উপায়, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ইতালি পরিচিতি

ইতালি দক্ষিণ ইউরোপের একটি দেশ যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে এটি বিশাল প্রত্নতাত্ত্বিক ধনসম্পদ ধারণ করে। ইতালির উত্তরাঞ্চলে আল্পস পর্বতমালা এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত, যা দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ইতালির রাজধানী রোম, দেশটির অন্যান্য প্রধান শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্লোরেন্স, যা রেনেসাঁ শিল্প ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, এবং ভেনিস, যা তার ক্যানেল এবং গন্ডোলা রাইডের জন্য জনপ্রিয়। ইতালির আরেকটি বিখ্যাত শহর মিলান, যা ফ্যাশন এবং ডিজাইনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে এর মধ্যে কিছু সাধারণ ধাপ রয়েছে যা অনুসরণ করা প্রয়োজন। এটি বিশেষত ভিসার প্রকার এবং যাত্রার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। এখানে সাধারণ কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:

১. স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়:

প্রথমে ইতালির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। ভর্তির পর তারা আপনাকে একটি ভর্তি চিঠি প্রদান করবে। ভর্তি চিঠি পাওয়ার পর ইতালির দূতাবাস বা কনস্যুলেটে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে, যেমন পাসপোর্ট, ভর্তি চিঠি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি।  ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত ১-৩ মাস সময় নিতে পারে।

২. কাজের ভিসায় (Work Visa) বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় :

প্রথমে ইতালির কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে। কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব পাওয়ার পর, ইতালির দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কাজের ভিসা পাওয়ার পর ইতালিতে পৌঁছে কাজ শুরু করতে পারবেন। এখানে কাজের পারমিট বা শ্রম অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে।

৩. পর্যটন ভিসায় (Tourist Visa) বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়:

যদি আপনি পর্যটক হিসেবে ইতালি যেতে চান, তাহলে পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এর জন্য পাসপোর্ট, ফ্লাইট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ভিসা ফি প্রয়োজন হবে। পর্যটন ভিসায় সাধারণত ৯০ দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয় এবং এই সময়ে আপনি কাজ করতে পারবেন না।

৪. পারিবারিক ভিসায় (Family Visa) বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়:

যদি ইতালিতে আপনার পরিবারের সদস্য থাকেন এবং আপনি তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চান, তাহলে পরিবার পুনর্মিলন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার পরিবারের সদস্যদের ইতালির বৈধ বাসিন্দা হতে হবে এবং তাদের পক্ষে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়? ও ভিসা আবেদন

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার খরচ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন যাত্রার উদ্দেশ্য, ভিসার ধরন, ফ্লাইট খরচ। কোন এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে সাধারনত ১২ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা লাগে কিন্তু এখানে মূলত অফিসিয়াল চার্জ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো:

১. ভিসা ফি:

পড়াশোনা ভিসা (Student Visa): প্রায় ৭,০০০ – ১০,০০০ টাকা

কাজের ভিসা (Work Visa): প্রায় ১২,০০০ – ১৫,০০০ টাকা।

পর্যটন ভিসা (Tourist Visa): প্রায় ৬,০০০ – ৮,০০০ টাকা।

ব্যবসায়িক ভিসা (Business Visa): প্রায় ১০,০০০ – ১২,০০০ টাকা।

২. ফ্লাইট খরচ:

ঢাকা থেকে রোম বা মিলানের একটি একমুখী ফ্লাইটের টিকিটের দাম সাধারণত ৭০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বিমান সংস্থা, বুকিংয়ের সময় এবং ভ্রমণের তারিখের উপর ভিত্তি করে এই ফ্লাইটের খরচ কম বা বেশি হতে পারে।

এই খরচগুলো সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে। নির্দিষ্ট খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ইতালির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বা একজন পেশাদার ভিসা কনসালটেন্টের সাহায্য নিতে পারেন।

আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে এবং লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার 3 টি উপায়

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এর মধ্যে ইতালি ভিসা আবেদন করা একটি গুরুত্তপূর্ণ ধাপ, কারণ সঠিক ভাবে ভিসার আবেদন করতে না পারলে ইতালী ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব আপনি নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করে সহজেই ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন:

প্রথমে আপনার ভিসার প্রকার (যেমন ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট, কাজের ভিসা ইত্যাদি) নির্ধারণ করুন, কারণ ভিসার প্রকার অনুযায়ী আবেদনের প্রয়োজনীয়তা ও নথিপত্র পরিবর্তিত হতে পারে।

আপনি কি ভিসায় ইতালি যেতে চান সেটা নির্ধারণ করার পরে আপনাকে কিছু ডাকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে, সাধারণভাবে নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজন হতে পারে:

ভিসার আবেদনপত্র, পাসপোর্ট, পাসপোর্টের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বিমানের টিকেট এবং হোটেল বুকিং, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, শিক্ষাগত সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)

সব নথি পত্র প্রস্তুত করার পরে ইতালীয় কনস্যুলেট বা দূতাবাসে আপনার আবেদনপত্র এবং সমস্ত নথি কনস্যুলেট বা ভিসা সেন্টারে জমা দিন।

প্রয়োজন হলে দূতাবাস থেকে একটি ইন্টারভিউ এর জন্য আপনাকে ডাকতে পারে, ইন্টারভিউ এর সময় সঠিকভাবে আপনার পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে হতে পারে।

আবেদন জমা দেওয়ার পর, কনস্যুলেট আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত জানাবে। সাধারণত, এটি কিছু সপ্তাহ সময় নিতে পারে।

ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এবং ফরম সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতালীয় দূতাবাস বা ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে।

ইতালি ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে

ইতালি ভিসার আবেদন করার জন্য ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন নথি প্রয়োজন হতে পারে তবে সাধারণত নিচের নথিগুলি প্রয়োজন হয়:

1. ভিসা আবেদনপত্র: পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র। 

2. পাসপোর্ট: বর্তমান পাসপোর্ট যার মেয়াদ আবেদন করার তারিখ থেকে কমপক্ষে ৬ মাস বেশি হতে হবে।

3. পাসপোর্টের ফটোকপি: পাসপোর্টের প্রথম পাতা এবং পূর্ববর্তী ভিসাগুলির ফটোকপি (যদি থাকে)।

4. পাসপোর্ট সাইজের ছবি: পাসপোর্ট সাইজের ছবি (প্রায় ৩.৫ × ৪.৫ সেমি) প্রয়োজন হবে।

5. ভিসার ফি: ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করে ব্যাংক এর রশিদ।

6. বিমান টিকেট: যাত্রার জন্য প্রমাণিত বুকিং টিকিট।

7. হোটেল বুকিং: থাকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রমাণ।

8. ব্যাংক স্টেটমেন্ট: গত ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট যা আপনার আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করে।

9. যদি শিক্ষার্থী হন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরিচয়পত্র।

ভিসার আবেদন করার আগে আপনার ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোন কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই  ইতালি দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করুন।

ইতালি ভিসা আবেদন লিংক

নিম্নলিখিত লিঙ্ক ব্যবহার করে আপনি ইতালি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন 

visa.vfsglobal.com/bgd/en/ita/apply-visa

এছাড়াও এখানে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক এবং সর্বশেষ তথ্য পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ বেতন কত? এবং সবচেয়ে বেশি বেতন কোন কাজে?

শেষকথা : আশা করি উপরের লেখা থেকে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আপনার আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচের প্রশ্ন উত্তর সমূহ দেখতে পারেন এবং আমাদের ইতালি ভিসা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন এবং ইনবক্স করতে পারেন আমাদের FujiTechBD ফেসবুক পাইজে ।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

ইতালি ১ টাকা বাংলাদেশের কত?

ইতালির ১ ইউরো (EUR) বাংলাদেশের কত টাকা (BDT) হবে, তা নির্ভর করে বর্তমান বিনিময় হারের উপর। আজকের বিনিময় হার অনুযায়ী ১ ইউরো সমান বাংলাদেশি টাকার মূল্য ১৩৩.১৯ টাকা।

ইতালিতে সর্বোচ্চ বেতন কত?

ইতালিতে সর্বোচ্চ বেতন বিভিন্ন পেশা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এবং সংস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তবে, সাধারণভাবে বলা যায় বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে ৭০০ – ১০০০ ইউরো ইনকাম করা সম্ভব।

Leave a Comment