ইতালির রাজধানী ও মুদ্রার নাম কি? যে 4 উপায়ে যেতে পারেন ইতালিতে

ইতালির রাজধানী ও মুদ্রার নাম কি? এবং খুব সহজেই যে ৪ টি উপায়ে যেতে পারবেন ইতালিতে এই পোস্ট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন চলুন শুরু করি।

ইতালি

ইতালি (Italy) দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত একটি বিখ্যাত দেশ, যা তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প, এবং ভ্রমণস্থানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ইতালির ইতিহাস রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে বিখ্যাত, যা প্রায় ২,৭০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্য বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাম্রাজ্য ছিল, যা ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত ছিল। রোম নগরী একসময় এই সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং এখনও সেখানে প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ইতালি পর্যটকদের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। এর সমুদ্রসৈকত, পাহাড়ি এলাকা, ঐতিহাসিক স্থান এবং বিখ্যাত খাবার পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

ইতালির রাজধানী ও মুদ্রার নাম কি?

ইতালির রাজধানীর নাম : ইতালির রাজধানী হলো রোম। এটি ইতালির সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল শহর। রোম প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল এবং বর্তমানে এই শহর বিশ্ব ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। শহরটি তার ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপত্য, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। রোমে কলোসিয়াম, প্যানথিয়ন, এবং ভ্যাটিকান সিটির মতো বিখ্যাত স্থান রয়েছে।

ইতালির মুদ্রার  নাম :ইতালির মুদ্রার নাম হলো ইউরো (€)। ২০০২ সাল থেকে ইতালি ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশের সাধারণ মুদ্রা। এর আগে ইতালি লিরা মুদ্রা ব্যবহার করত।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ইতালির বড় শহর

ইতালির অনেক বড় বড় শহর রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:

১. রোম (Rome): ইতালির রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। রোম প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র এবং ভ্যাটিকান সিটির নিকটবর্তী।

২. মিলান (Milan): ইতালির ফ্যাশন এবং অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। মিলান আন্তর্জাতিকভাবে ফ্যাশন এবং ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত।

৩. নেপলস (Naples): দক্ষিণ ইতালির বৃহত্তম শহর, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এই শহর পিৎজার জন্যও বিখ্যাত।

৪. ফ্লোরেন্স (Florence): ফ্লোরেন্স রেনেসাঁর উৎসস্থল, যা তার শিল্প, স্থাপত্য, এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত।

৫. ভেনিস (Venice): ভেনিস খাল এবং নৌকার শহর হিসেবে পরিচিত, ভেনিস তার অনন্য জলপথ ও রোমান্টিক পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।

৬. তুরিন (Turin): শিল্প, ব্যবসা এবং গাড়ি উৎপাদনের কেন্দ্র। এখানে ফিয়াট কোম্পানির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।

৭. জেনোয়া (Genoa): একটি প্রধান বন্দর নগরী, যা তার সমুদ্র বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ইতিহাসের জন্য পরিচিত।

৮. বলোনিয়া (Bologna): একটি শিক্ষাবিদ্যা কেন্দ্র, যেখানে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।

ইতালির এই বড় বড়  শহরগুলো ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ইতালি প্রদেশ কয়টি?

ইতালিতে মোট ২০টি প্রদেশ বা অঞ্চল (Regions) রয়েছে। প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই প্রদেশগুলো হলো:

১. আবরুজ্জো (Abruzzo)
২. বেসিলিকাটা (Basilicata)
৩. কালাব্রিয়া (Calabria)
৪. ক্যাম্পানিয়া (Campania)
৫. এমিলিয়া-রোমাগ্না (Emilia-Romagna)
৬. ফ্রিউলি-ভেনেজিয়া জিউলিয়া (Friuli-Venezia Giulia)
৭. লাজিও (Lazio)
৮. লিগুরিয়া (Liguria)
৯. লোম্বার্ডি (Lombardy)
১০. মার্শে (Marche)
১১. মলিসে (Molise)
১২. পেমন্টে (Piedmont)
১৩. পুলিয়া (Apulia)
১৪. সার্দিনিয়া (Sardinia)
১৫. সিসিলি (Sicily)
১৬. টোসকানা (Tuscany)
১৭. ত্রেন্তিনো-আল্টো আদিজে (Trentino-Alto Adige)
১৮. উমব্রিয়া (Umbria)
১৯. ভাললে দ’আওস্তা (Aosta Valley)
২০. ভেনেতো (Veneto)

ইতালি যাওয়ার উপায় / যে ৪ উপায়ে যেতে পারেন ইতালিতে

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এখন কি কি উপায়ে ইতালিতে যাওয়া যায় এ বিষয় গুলো আলোচনা করব:

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়? ও ভিসা আবেদন

১. ট্যুরিস্ট ভিসা (Schengen Visa):

ইতালি মূলত শেঞ্জেন এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য শেঞ্জেন ভিসা প্রয়োজন। ট্যুরিস্ট ভিসা ৯০ দিনের জন্য দেয়া হয়। এই ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন বৈধ পাসপোর্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, হোটেল বুকিং/বাসস্থান সংক্রান্ত তথ্য, বিমানের টিকিট, ভ্রমণ বীমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। 

২. স্টুডেন্ট ভিসা:

শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নত ইতালিতে পড়াশোনার জন্য যাওয়া যায় এ  ভিসায় আবেদন করার জন্য কিছু নথি প্রয়োজন যেমন।

  • ইতালির কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি নিশ্চিতকরণ
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শিক্ষার ব্যয় বহনের জন্য ফান্ড)
  • পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদপত্র

৩. ওয়ার্ক ভিসা:

ইতালি একটি উন্নত দেশ হওয়ায় এখানে উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ আছে আপনি যদি ইতালিতে কাজ এর ভিসায় যেতে চান, তবে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য ইতালির কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির অফার থাকা আবশ্যক। চাকরির অফার পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ডুকুমেন্ট যেমন চাকরির অফার লেটার, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ, বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ইতালি দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। 

৪. পরিবারিক ইতালি ভিসা (Family Reunion Visa):

পরিবারিক ভিসায় ইতালিতে যাওয়া সম্ভব, যদি আপনার পরিবারের কেউ ইতালিতে বাস করে, তবে তাদের সাথে পুনর্মিলনের জন্য এই ভিসায় আবেদন করতে পারেন। এজন্য কিছু প্রয়োজনীয় নথি প্রয়োজন যেমন:

  • ইতালিতে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের প্রমাণপত্র
  • পরিবারের সাথে সম্পর্কের প্রমাণ

আপনি যদি সঠিক ভাবে এসব এর মধ্যে যেকোনো একটি ভিসায় আবেদন করতে পারেন তাহলে সহজেই ইতালির ভিসা পেতে পারেন।

ইতালি ভিসা আবেদন লিংক

work.appointment@vfsglobal.com ঠিকানায় শুধুমাত্র একটি ইমেল এর মাধ্যমে আবেদন পাঠাতে হবে।

আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে এবং লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার 3 টি উপায়

ইতালির আয়তন ও জনসংখ্যা কত?

ইতালির আয়তন: ইতালির মোট আয়তন হলো প্রায় ৩,০১,৩৪০ বর্গকিলোমিটার। এটি ইউরোপের একটি মাঝারি আকারের দেশ, যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত।

ইতালির জনসংখ্যা: ইতালির জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি (৬০ মিলিয়ন) মানুষ। জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বসবাসের ধরন অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে। বড় শহরগুলোর মধ্যে যেমন রোম, মিলান, এবং নেপলসে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, তবে গ্রামীণ অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যা কম।

ইতালি ও বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য

ইতালি এবং বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য হলো ৪ ঘণ্টা। ইতালি সাধারণত সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান টাইম (CET) অনুসরণ করে, এবং বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টাইম (BST) অনুসরণ করে।

যদি ডে লাইট সেভিংস (Daylight Saving Time) চলমান থাকে (মার্চের শেষ থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত), তখন এই পার্থক্য হয় ৫ ঘণ্টা।

যেমন: বাংলাদেশে যদি দুপুর ১২টা হয়, তাহলে ইতালি টাইম ৮টা (ডে লাইট সেভিংস না থাকলে) অথবা সকাল ৭টা (ডে লাইট সেভিংস চলাকালীন)।

উপসংহার: আশা করি উপরের লেখা থেকে ইতালির রাজধানী ও মুদ্রার নাম কি? ইতালির বড় শহর, ইতালি প্রদেশ কয়টি, এবং ইতালি যাওয়ার ৪ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আপনার আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের ইতালি ভিসা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন এবং ইনবক্স করতে পারেন আমাদের FujiTechBD ফেসবুক পাইজে

ইতালি ১০০ টাকা বাংলাদেশের কত?

ইতালি ইউরো ব্যবহার করে, আর বাংলাদেশী টাকায় রূপান্তরের জন্য ইউরোকে টাকার সাথে তুলনা করতে হবে। বর্তমানে (সেপ্টেম্বর ২০২৪ অনুযায়ী) ১ ইউরো প্রায় ১২০-১২৫ বাংলাদেশী টাকার সমান।
তাহলে, ১০০ ইউরো বাংলাদেশী টাকায় হবে:
 ১০০ ইউরো × ১২০ (বা ১২৫) টাকা/ইউরো = ১২,০০০ (বা ১২,৫০০) টাকা

Leave a Comment