বিএমইটি কার্ড কি, বিএমইটি কার্ড করতে কত টাকা লাগে, বিএমইটি কার্ড কিভাবে করতে হয়, বিএমইটি কার্ডের সুবিধা কি, আমি প্রবাসী বিএমইটি কার্ড ডাউনলোড, এসব প্রশ্ন একজন প্রবাস গমন ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য খুবই সাধারণ প্রশ্ন, তবে এসব সম্পর্কে অবগত হওয়া ও একজন প্রবাসীর জন্য অনেক গুরুত্ত্ব পূর্ণ তানাহলে প্রবাসে যাবার সময় বিভিন্ন দালালের খপ্পরে পরে মোটা অঙ্কের টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাই আপনি যদি একজন প্রবাসী হন বা প্রবাসে চাকরির পরিকল্পনা করছেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ।
বিএমইটি কার্ড কি
বিএমইটি (BMET) কার্ড হলো বাংলাদেশের ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (BMET) কর্তৃক প্রদত্ত একটি পরিচয়পত্র। এই কার্ডটি মূলত বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যাওয়া কর্মীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিএমইটি কার্ডটি অর্জন করা একজন কর্মীর বিদেশে বৈধভাবে কাজ করার যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র প্রস্তুত থাকার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
বিএমইটি কার্ড পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক নথিপত্র জমা দেওয়া।
এটি একজন কর্মীকে বিদেশে কাজ করতে যেতে সাহায্য করে এবং তারা বিদেশে থাকার সময় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সুবিধা এবং সুরক্ষা পেতে পারেন।
বিএমইটি কার্ড কিভাবে করতে হয়?
বিএমইটি কার্ড করতে হলে আপনাকে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে যা বিএমইটি কার্ড আবেদন করার সময় প্রয়োজন হবে চলুন বিএমইটি কার্ড কিভাবে করতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক,
প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনি বিদেশে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বিএমইটি কার্ড পেতে হলে আপনাকে বিদেশে কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এই প্রশিক্ষণ আপনার নিজ জেলায় অবস্থিত টিটিসি(TTC) বা কারিগর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ করতে পারবেন, এই প্রশিক্ষণ টি মূলত ৩ দিনের হয়ে থাকে, প্রশিক্ষণ শেষে আপনাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে, আর বিএমইটি কার্ড করার জন্য এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে, TTC তে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন।
তারপর আপনি যে দেশে যাবার জন্য বিএমইটি কার্ড করতে চাচ্ছেন সেই দেশের ভিসা প্রয়োজন হবে মানে আপনার বৈধ পসপোর্টে সেই দেশের দূতাবাস থেকে বৈধ ভিসা স্ট্যাম্প করে নিতে হবে, এবং আমি প্রবাসী ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল এপ থেকে অনলাইন এ আবেদন করে নির্ধারিত ফি ব্যাংক এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে এবং জনশক্তি অফিসে গিয়ে ফিঙারপ্রিন্ট দিলেই আপনার কাজ শেষ, সবকিছু ঠিকঠাক হলে, বিএমইটি কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন যাচাই করে আপনার বিএমইটি কার্ড প্রস্তুত করবে। আপনাকে আমি প্রবাসী ওয়েবসাইট থেকে কার্ডটি ডাওনলোড করে নিতে হবে।
বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন করতে কি কি লাগে?
বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট তথ্য ও ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। যদিও প্রয়োজনীয়তা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য আপনার অবশ্যই “আমি প্রবাসী” অ্যাপ বা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটটি দেখা উচিত।
সাধারণত প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডকুমেন্ট:
- ব্যক্তিগত তথ্য: নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ইমেইল, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।
- পাসপোর্টের স্ক্যান কপি: পাসপোর্টের প্রথম পাতা এবং ভিসা পাতার স্ক্যান কপি।
- পাশপোর্ট সাইজের ছবি: সাদা পটভূমির সাম্প্রতিক পাশপোর্ট সাইজের ছবি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের স্ক্যান কপি।
- কাজের অভিজ্ঞতার সনদ: (যদি থাকে) কাজের অভিজ্ঞতার সনদ বা সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি।
- অন্যান্য: অন্যান্য কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি ইত্যাদি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- সঠিক তথ্য: সব তথ্য সঠিকভাবে দিন। ভুল তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
- স্পষ্ট ছবি: স্ক্যান করা ডকুমেন্টগুলি স্পষ্ট ও পঠনযোগ্য হতে হবে।
- সময়মত পেমেন্ট: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি পরিশোধ করুন।
- সহায়তা: যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে অ্যাপের সহায়তা বিভাগে যোগাযোগ করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
- নিয়মিত আপডেট: বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ও শর্তাবলী সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য অবশ্যই “আমি প্রবাসী” অ্যাপ বা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটটি দেখুন।
- সরাসরি যোগাযোগ: কোনো বিষয়ে নিশ্চিত না হলে, আপনি “আমি প্রবাসী” এর হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
“আমি প্রবাসী” অ্যাপের ওয়েবসাইট থেকে বিএমইটি কার্ড কি এবং এসম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন। সুবিধার জন্য, আপনি “আমি প্রবাসী” অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত ভিডিও টিউটোরিয়ালও দেখতে পারেন।
বিএমইটি কার্ড করতে কত টাকা লাগে?
যদি নিজে নিজে কাজ করতে পারেন তাহলে বিএমইটি (BMET) কার্ড করতে সাধারণত ৩০০ টাকা খরচ হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট ফি আপনার এলাকার বিএমইটি অফিসের উপর নির্ভর করে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। ফি সম্পর্কে সঠিক তথ্যের জন্য স্থানীয় বিএমইটি অফিসে যোগাযোগ করা উচিত।
বিএমইটি কার্ড করতে কত দিন লাগে?
বিএমইটি (BMET) কার্ড করতে সাধারণত ৩-৭ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে এটি নির্ভর করে স্থানীয় অফিসের কার্যক্ষমতা এবং কাজের চাপের উপর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ১০ কার্যদিবস পর্যন্তও সময় নিতে পারে। “আমি প্রবাসী” অ্যাপ বা বিএমইটি ওয়েবসাইট থেকে আপনি আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস পরীক্ষা করতে পারবেন।
বিএমইটি কার্ডের সুবিধা কি?
বিএমইটি (BMET) কার্ডের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, বিশেষ করে যারা বিদেশে কাজ করতে যেতে চান তাদের জন্য। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
- অভিবাসনের প্রমাণপত্র: বিএমইটি কার্ড বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য একটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট। এটি প্রমাণ করে যে আপনি বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন।
- নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: বিএমইটি কার্ডধারীরা বিভিন্ন সেবা এবং সুরক্ষা সুবিধা পেতে পারেন, যেমন প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড থেকে সহায়তা এবং বিভিন্ন আইনগত সুরক্ষা।
- কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সহায়তা: বিএমইটি কার্ডধারীদের কাজ সংক্রান্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সরকার থেকে সহায়তা পাওয়া যায়।
- প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ: বিএমইটি কার্ডধারীরা বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ সেবা গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- সুবিধাজনক ঋণ সুবিধা: বিএমইটি কার্ডধারীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেতে পারেন, যা তাদের বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে সাহায্য করে।
- স্বল্পমূল্যে বিমা সুবিধা: বিএমইটি কার্ডধারীরা স্বল্প মূল্যে বিমা সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের প্রবাস জীবনে আর্থিক সুরক্ষা দেয়।
এই কার্ডটি একজন অভিবাসী শ্রমিকের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, যা তাকে বিদেশে নিরাপদ ও সুরক্ষিত কাজ করার সুযোগ দেয়।
আমি প্রবাসী বিএমইটি কার্ড ডাউনলোড
আপনি প্রবাসী হিসেবে বিএমইটি কার্ড ডাউনলোড করতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- বিএমইটি ওয়েবসাইটে যান: BMET অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন।
- ই-রেজিস্ট্রেশন (E-Registration) সেকশনে যান: ওয়েবসাইটে গিয়ে “E-Registration” বা “প্রবাসী কর্মীর ই-রেজিস্ট্রেশন” সেকশনে ক্লিক করুন।
- লগইন করুন: আপনি যদি ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন, তাহলে আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। যদি আপনি নতুন হন, তাহলে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন।
- কার্ড ডাউনলোড করুন: লগইন করার পর, আপনি আপনার প্রোফাইল থেকে বিএমইটি কার্ডের তথ্য দেখতে পারবেন। এখান থেকে আপনি কার্ডটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
- প্রিন্ট করুন: ডাউনলোড করার পর আপনি কার্ডটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
যদি অনলাইনে কার্ড ডাউনলোড করতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনার নিকটস্থ বিএমইটি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
শেষ কথা : আশা করি উপরের লেখা থেকে বিএমইটি কার্ড কি, বিএমইটি কার্ড করতে কত টাকা লাগে, বিএমইটি কার্ড কিভাবে করতে হয়, বিএমইটি কার্ডের সুবিধা কি সহ বিএমইটি কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন, আপনার আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের প্রবাস তথ্য় ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন এবং ইনবক্স করতে পারেন আমাদের FujiTechBD ফেসবুক পাইজে ।