উচ্চ বেতনে কাজের জন্য ইউরোপ যেতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়? এবং কিভাবে ভিসার আবেদন করা যায়।
ইউরোপ মহাদেশ মূলত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং পশ্চিম গোলার্ধে প্রসারিত। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, যার আয়তন প্রায় ১০.১৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। ইউরোপের পূর্বে এশিয়া, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর অবস্থিত।
ইউরোপে কাজের বাজার অনেক প্রতিযোগিতামূলক হলেও, দক্ষ এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, গ্রীস, যুক্তরাজ্যে, স্পেন, ইতালির মত উন্নত দেশে উচ্চ বেতনে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
এই পোস্ট থেকে যা জানতে পারবেন
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে ৩ ধরনের ভিসায় যাওয়া যায় নিচে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. শেনজেন ভিসার মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়া
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের অধিকাংশ দেশে ভ্রমণের জন্য শেনজেন ভিসা নিতে হয়। শেনজেন ভিসা নিয়ে আপনি একবার ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলের একটি দেশে প্রবেশ করলে, সেই ভিসা দিয়ে বাকি শেনজেন দেশগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারবেন। শেনজেন অঞ্চল ভুক্ত ২৬টি দেশ আছে।
৩. পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ইউরোপে যাওয়া
যদি আপনার লক্ষ্য ইউরোপে পড়াশোনা করা হয়, তাহলে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া রয়েছে, তবে মূলত আপনাকে ইউরোপের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং তার প্রমাণ দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
৪. কাজের উদ্দেশ্যে ইউরোপে যাওয়া
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য ভিসা পেতে পারেন, বিশেষ করে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজের অফার পেলে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করে ইউরোপ যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়?
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের অনেক দেশে ভ্রমণ, পড়াশোনা, কাজ বা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যাওয়া সম্ভব। তবে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা আলাদা ভিসা প্রক্রিয়া রয়েছে। নিচে ইউরোপের সেই দেশগুলো উল্লেখ করা হলো যেখানে আপনি বাংলাদেশ থেকে যেতে পারেন।
জার্মানি |
ফ্রান্স |
ইতালি |
স্পেন |
নেদারল্যান্ডস |
বেলজিয়াম |
সুইডেন |
ডেনমার্ক |
নরওয়ে |
ফিনল্যান্ড |
সুইজারল্যান্ড |
অস্ট্রিয়া |
গ্রিস |
পর্তুগাল |
হাঙ্গেরি |
পোল্যান্ড |
চেক প্রজাতন্ত্র |
লুক্সেমবার্গ |
আইসল্যান্ড |
লাটভিয়া |
লিথুয়ানিয়া |
এস্তোনিয়া |
স্লোভেনিয়া |
স্লোভাকিয়া |
মাল্টা |
লিচেনস্টেইন |
আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে এবং লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার 3 টি উপায়
কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়?
বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে যাওয়া যায় কিন্তু এটি মূলত নির্ভর করে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সেই দেশের জীবনযাত্রার খরচ, ভিসা প্রক্রিয়া, এবং ভ্রমণের অন্যান্য খরচের ওপর। সাধারণভাবে, ইউরোপের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের কিছু দেশ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। আপনি যদি কাজের ভিসায় এসব দেশে যেতে চান তাহলে ৮ থেক ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে যাওয়া সম্ভব। এখানে কিছু দেশ এর তালিকা দেওয়া হলো, যেখানে কম খরচে যাওয়া যায় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম:
১. পোল্যান্ড
২. হাঙ্গেরি
৩. রোমানিয়া
৪. বুলগেরিয়া
৫. লাটভিয়া
৬. লিথুয়ানিয়া
৭. পর্তুগাল
৮. তুরস্ক (ইউরোপের একটি আংশিক দেশ)
ইউরোপে কম খরচে যাওয়ার জন্য পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো বেশ উপযুক্ত এবং সাশ্রয়ী, এবং যাদের জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
IELTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়?
IELTS ছাড়া ইউরোপের অনেক কয়েকটি দেশে যাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে যদি আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ব্যবসা, কাজ হয়ে থাকে। তবে যদি আপনার উদ্দেশ্য পড়াশোনা হয়, কিছু দেশ IELTS ছাড়া বিকল্প পরীক্ষা বা ভাষার দক্ষতার প্রয়োজন হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু দেশ এর নাম দেওয়া হল যেখানে IELTS ছাড়া যেতে পারেন:
১. জার্মানি
২. নেদারল্যান্ডস
৩. নরওয়ে
৪. পোল্যান্ড
৫. লাটভিয়া
৬. এস্তোনিয়া
৭. হাঙ্গেরি
৮. ফিনল্যান্ড
৯. রাশিয়া
১০. ইউক্রেন
এসব দেশে পড়াশোনার জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য IELTS ছাড়া অন্য পরীক্ষা যেমন TOEFL বা Cambridge English গ্রহণ করে। এছাড়া, আপনি যদি পূর্বে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকেন, তাহলে IELTS ছাড়াও আবেদন করতে পারবেন। এবং কাজের জন্য IELTS ছাড়াই আবেদন করা যায়, তবে কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী ইংরেজি বা স্থানীয় ভাষার প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ বেতন কত? এবং সবচেয়ে বেশি বেতন কোন কাজে?
সবচেয়ে বেশি বেতন কোন দেশে?
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে বেতনের পরিমাণ নির্ভর করে অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবনযাত্রার খরচ, এবং কাজের সুযোগের ওপর। ইউরোপের মধ্যে কিছু দেশ উচ্চ বেতনে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। নিচে সবচেয়ে বেশি বেতন কোন দেশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করা হল:
১. সুইজারল্যান্ড: সুইজারল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ, এবং এখানে বেতনও খুব বেশি। বিশেষ করে ব্যাংকিং, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিনান্স, এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বেতন অনেক বেশি।
২. লুক্সেমবার্গ: লুক্সেমবার্গে বেতন খুবই বেশি, বিশেষ করে ফিনান্স এবং ব্যাংকিং সেক্টরে। এটি একটি ছোট দেশ, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা বেশি, তবে উচ্চ বেতনের কারণে এটি খুব লাভজনক।
৩. নরওয়ে: নরওয়ে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং বিশেষ করে তেল, গ্যাস, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উচ্চ বেতন পাওয়া যায়।
৪. ডেনমার্ক: ডেনমার্কে বিশেষ করে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং প্রকৌশল খাতে উচ্চ বেতন দেওয়া হয়। জীবনযাত্রার মান উচ্চ এবং করও বেশি, তবে বেতন যথেষ্ট বেশি হওয়ায় এটি ভালোভাবে সামলানো যায়।
৫. জার্মানি: জার্মানি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ি শিল্প, এবং বিজ্ঞান গবেষণায় ভালো বেতন পাওয়া যায়।
৬. নেদারল্যান্ডস: এখানে জীবনযাত্রার মানও ভালো, এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় বেতন অনেক বেশি।
৭. যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের বিশেষ করে লন্ডনে ফিনান্স, ব্যাংকিং, আইটি এবং আইন খাতে অনেক উচ্চ বেতন পাওয়া যায়।
ইউরোপের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোতে উচ্চ বেতন পাওয়া যায়, যেখানে জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত।
আরও পড়ুন: লাটভিয়া যেতে কত টাকা লাগে? এবং যে ৩ উপায়ে লাটভিয়া যেতে পারবেন
ইউরোপ ভিসা আবেদন
কাজের জন্য ইউরোপে যেতে হলে শেনজেন ভিসা অথবা নন-শেনজেন ভিসা প্রয়োজন হয়। নিচে ভিসা আবেদন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১. শেনজেন ভিসা
শেনজেন ভিসায় ইউরোপের ২৬টি দেশে ভ্রমণের অনুমতি পাওয়া য। এবং এটি সবচেয়ে সাধারণ ভিসা, বিশেষ করে কাজ, ব্যবসা বা অল্প সময়ের ভ্রমণের জন্য। শেনজেন ভিসা দিয়ে একবার অনুমতি পেলে, আপনি শেনজেন এলাকার সব দেশেই ভ্রমণকাজের জন্য অনুমতি পাবেন। শেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয় যেমন :
শেনজেন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথমে, আপনি যে দেশে যেতে চান সেই দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে ভিসা আবেদন করতে হবে। যদি একাধিক দেশে ভ্রমণ করেন তবে প্রথম প্রবেশকারী দেশ থেকে আবেদন করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র:
- ভিসা আবেদন ফর্ম
- পাসপোর্ট: যেটির মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস থাকতে হবে এবং দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি: দুই কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- ফ্লাইটের বিবরণ: আপনার যাত্রার জন্য বিমানের বুকিং কনফার্মেশন।
- বীমা: আপনার ভ্রমণের জন্য অন্তত €৩০,০০০ কভারেজ সহ ভ্রমণ স্বাস্থ্য বীমা।
- কাজের প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়): কাজের ক্ষেত্রে ছুটি অনুমোদনের চিঠি বা আপনার ব্যবসার প্রমাণ।
- ভিসা ফি: শেনজেন ভিসার জন্য সাধারণত €৮০ ফি দিতে হয় (বয়স্কদের জন্য)।
২. নন-শেনজেন ভিসা
ইউরোপের কিছু দেশ শেনজেন এলাকার বাইরে, এবং তাদের নিজস্ব ভিসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে ভ্রমণের জন্য আলাদা ভিসার আবেদন করতে হয়।
শেষ কথা: আজকে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়, কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি, আপনার আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের ইতালি ভিসা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন এবং ইনবক্স করতে পারেন আমাদের FujiTechBD ফেসবুক পাইজে।
কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়?
১. পোল্যান্ড
২. হাঙ্গেরি
৩. রোমানিয়া
৪. বুলগেরিয়া
৫. লাটভিয়া
৬. লিথুয়ানিয়া
৭. পর্তুগাল
৮. তুরস্ক