লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে এবং লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার 3 টি উপায়

সহজেই যাওয়া যায় ইউরোপ এর দেশ লুক্সেমবার্গ, কিন্তু কিভাবে? আজকে আপনাদের জানাবো লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এবং লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে।

লুক্সেমবার্গ একটি ছোট কিন্তু ধনী ইউরোপীয় দেশ। এই দেশটি ইউরোপে মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত এবং এর সীমান্তে জার্মানি, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম রয়েছে। লুক্সেমবার্গকে তার উচ্চমানের জীবনযাত্রা, সমৃদ্ধ ইতিহাস, এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক এর জন্য পরিচিত। লুক্সেমবার্গ রাজধানীর নাম হচ্ছে লুক্সেমবার্গ শহর (Luxembourg City)। লুক্সেমবার্গ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত, যার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশের মধ্যে পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণ সম্ভব। এই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়ায় এখানে উচ্চ বেতনে বাংলাদেশীদের জন্য অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে কিন্তু অনেকেই জানেনা কিভাবে এই দেশটিতে কাজের ভিসায় যাওয়া যায় এবং যেতে কত টাকা লাগে,

তাই আজকে আপনাদের জানাবো লুক্সেমবার্গ যাওয়ার উপায়, লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে, লুক্সেমবার্গ বেতন কত এবং লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব কিভাবে পাওয়া যায়।

 লুক্সেমবার্গ যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গ যাওয়ার জন্য আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ভাবে লুক্সেমবার্গ এ যেতে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়।  যেহেতু লুক্সেমবার্গ সেনজেন অঞ্চলের অংশ, তাই লুক্সেমবার্গের জন্য সেনজেন ভিসা প্রয়োজন। সেনজেন ভিসা দিয়ে আপনি প্রাথমিক ভাবে  লুক্সেমবার্গ এ  ৯০ দিন অবস্থান করার  পারেন। তারপর ঐ দেশের ইমিগ্রেশন থেকে কাজ এর অনুমতির জন্য ওয়ার্ক পারমিট কার্ড নিতে হবে তাহলে আপনি লুক্সেমবার্গ এ স্থায়ী ভাবে কাজ করতে পারবেন। 

বাংলাদেশে লুক্সেমবার্গের কোনো দূতাবাস নেই, তবে আপনি ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাস এর মাধ্যমে লুক্সেমবার্গের সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। জার্মান দূতাবাস লুক্সেমবার্গের জন্য সেনজেন ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করে থাকে।

বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাস এর ঠিকানা হচ্ছে Baridhara Diplomatic Zone, Dhaka 1212, Bangladesh এবং ওয়েবসাইট লিংক  https://dhaka.diplo.de

আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ বেতন কত? এবং সবচেয়ে বেশি বেতন কোন কাজে?

লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গে যেতে মূলত ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাগে তবে এই খরচ নির্ভর করে মূলত বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন বিমান টিকিট, ভিসা ফি, ভিসা প্রসেসিং ইত্তাদি। 

আপনি যদি কোন দালালের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে ১০ লক্ষ টাকা লাগবে আর যদি সরকারী ভাবে যান তাহলে ২ লক্ষ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে, আর যদি লুক্সেমবার্গে আপনার পরিচিত কেউ থাকে এবং তার মাধ্যমে ভিসা নিতে পারেন তাহলে আরও কম খরচে যেতে পারবেন। 

লুক্সেমবার্গ যেতে কি কাগজপত্র লাগে?

লুক্সেমবার্গ হচ্ছে  ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সেনজেন ভুক্ত দেশ তাই সেনজেন  ভিসার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র  জমা দিতে হয়। সাধারণত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হলো:

  • পূরণকৃত এবং স্বাক্ষরিত ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে এবং ২ পৃষ্ঠায় ফাঁকা থাকতে হবে)।
  • সম্প্রতি তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ফ্লাইটের বুকিং (সাধারণত টিকিটের পূর্ণকরণ না হলেও হবে, তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য ট্রাভেল বুকিং প্রয়োজন)।
  • হোটেল বুকিং বা থাকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত নথি।
  • ভ্রমণ বীমা (কমপক্ষে ৩০,০০০ ইউরো কভারেজ সহ, যা শেঙ্গেন অঞ্চলজুড়ে বৈধ)।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ৩-৬ মাসের)।
  • কর্মসংস্থান বা পড়াশোনার প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • ভিসা ফি: সেনজেন ভিসার জন্য সাধারণত প্রায় ৮০ ইউরো ফি প্রয়োজন।

লুক্সেমবার্গ ভিসার দাম কত টাকা?

লুক্সেমবার্গ ভিসা সেনজেন ভিসার অধীনে তাই এই ভিসার  ফি প্রায় ৮০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৯,৫০০ টাকা । ৬-১২ বছর বাচ্চাদের ভিসা ফি ৪০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায়  ৪,৭০০ টাকা এবং ৬ বছরের কম বাচ্চাদের জন্য সাধারণত ভিসা  ফি মওকুফ থাকে।

ভিসা ফি ছাড়াও, যদি আপনি কোনো ভিসা এজেন্ট বা এজেন্সি এর মাধ্যমে আবেদন করেন, তাহলে ভিসা ফি, এয়ার টিকিট এবং প্রসেসিং ফি সহ এই ভিসার দাম হতে পারে ৮ লক্ষ টাকা।  

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়? ও ভিসা আবেদন

লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়?

লুক্সেমবার্গে কাজ করতে চাইলে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হবে। এটি মূলত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। লুক্সেমবার্গে সাধারণত দুই ধরণের ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করা তাহলো ১. স্বল্পমেয়াদী ওয়ার্ক পারমিট এটি ৯০ দিনের জন্য এবং ২. দীর্ঘমেয়াদী ওয়ার্ক পারমিট এটি এক বছরের জন্য বৈধ এবং নির্দিষ্ট কাজের ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য। 

লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আপনাকে লুক্সেমবার্গের কোনো কোম্পানী থেকে কাজের জন্য নিয়োগপত্র (Job Offer) নিতে হবে এবং কাজের অফার পাওয়ার পর ঐ কোম্পানী আপনার পক্ষ থেকে লুক্সেমবার্গের ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবে। ওয়ার্ক পারমিট আবেদন অনুমোদিত হলে, আপনি ওয়ার্ক পারমিটের লেটার পাবেন এবং ঐ লেটার এর সাহায্যে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাসে সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।

লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব/যে 3 টি উপায়ে পাবেন লুক্সেমবার্গ এর নাগরিকত্ব

লুক্সেমবার্গের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। মূলত নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটির কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। এখানে  লুক্সেমবার্গে নাগরিকত্ব পাওয়ার ৩ টি সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

১. লুক্সেমবার্গে বসবাস করে: যদি আপনি লুক্সেমবার্গের আইন মেনে কোন প্রকার অপরাধ ছাড়াই কমপক্ষে ৫ বছর বাস করেন, তবে আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আপনাকে লুক্সেমবার্গের ভাষায় (লুক্সেমবার্গিশ) মৌলিক ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং লুক্সেমবার্গের সাংবিধানিক আইন ও সমাজ সম্পর্কে একটি শিক্ষামূলক কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

২. বৈবাহিক সম্পর্ক: যদি আপনি একজন লুক্সেমবার্গের নাগরিককে বিয়ে করেন, তবে আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সাধারণত আপনার বৈবাহিক সম্পর্ককে কমপক্ষে ৩ বছর ধরে ধরে রাখতে হবে এবং আবেদন করার সময় আপনাকে অবসশই লুক্সেমবার্গে বাস করতে হবে।

৩. বিশেষ অবদান: যদি কেউ লুক্সেমবার্গে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে পারেন তাহলে ঐ দেশের আইন অনুযায়ী আপনাকে লুক্সেমবার্গের নাগরিকত্ব দেওয়া হতে পারে।

লুক্সেমবার্গ বেতন কত?

লুক্সেমবার্গ  ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি তাই এই দেশে বেতন তুলনামূলক ভাবে বেশি, তবে লুক্সেমবার্গ এর বেতন বিভিন্ন পেশা, কাজের অভিজ্ঞতা, এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে। 

লুক্সেমবার্গে দক্ষ শ্রমিকদের বেতন প্রতি মাসে প্রায় ২,৭০০ ইউরো বা 3 লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং একজন অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন প্রতি মাসে প্রায় ২,৪০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় 3 লক্ষ টাকা।

এবং আপনি লুক্সেমবার্গে কাজ করলে ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশের সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারবেন।

লুক্সেমবার্গ কোন কাজের চাহিদা বেশি

লুক্সেমবার্গে কাজের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে উচ্চ চাহিদা রয়েছে, কারণ দেশটিতে তার অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়ে থাকে। 

লুক্সেমবার্গে  প্রধানত হোটেল ম্যানেজমেন্ট, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, কংসট্রাকশন ওয়ার্ক, ড্রাইভার, ফ্যাক্টরী কাজ সহ বিভিন্ন কাজে বিদেশী কর্মীদের চাহিদা রয়েছে আপনি এসব কাজে লুক্সেমবার্গে গিয়ে প্রতিমাসে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা অনায়াসে ইনকাম করতে পারবেন। 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় এবং ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

লুক্সেমবার্গ যেতে কত সময় লাগে?

বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই তাই সাধারণত এক বা একাধিক ট্রানজিটের মাধ্যমে যেতে হয়। ঢাকা থেকে ইউরোপের কোনো প্রধান শহরে বা  দুবাই, ইস্তানবুল, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস প্রথম ফ্লাইটটি সাধারণত ৭-১০ ঘণ্টার মধ্যে হয়। ট্রানজিটের সময় গন্তব্য এবং এয়ারলাইনের উপর নির্ভর করে ২-৫ ঘণ্টার মতো হতে পারে।

সুতরাং, বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গে পৌঁছাতে মোট ভ্রমণের সময় ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে হবে, যা ট্রানজিটের উপর নির্ভরশীল।

উপসংহার: আশা করি উপরের লেখা থেকে লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে, লুক্সেমবার্গ নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এবং লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, আপনার আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন এবং ইনবক্স করতে পারেন আমাদের FujiTechBD ফেসবুক পাইজে।

আরও পড়ুন: লাটভিয়া যেতে কত টাকা লাগে? এবং যে ৩ উপায়ে লাটভিয়া যেতে পারবেন

লুক্সেমবার্গ ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

লুক্সেমবার্গে মুদ্রার একক হলো ইউরো (EUR)। বাংলাদেশি টাকায় ১ ইউরোর মান প্রায় ১২৩ টাকা
লুক্সেমবার্গ ১ ইউরো = ১২৩ টাকা
তবে মুদ্রার মান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি নির্দিষ্ট দিন বা সময় অনুযায়ী বিনিময় হার যাচাই করতে পারেন।

Leave a Comment