Thursday, September 19News That Matters

জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি? এবং বেতন কত

Spread the love

জাপান যাওয়ার আগে জেনে নিন জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং এসব কাজের বেতন কেমন, এই পোস্ট থকে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি

জাপান একটি উন্নত দেশ, এখানে ছোট বড় অনেক ব্রান্ড কোম্পানী আছে যেখানে বিদেশী কর্মীর চাহিদা অনেক। প্রতিবছর জাপানে লক্ষ লক্ষ বিদেশী কর্মী উচ্চ বেতনে কাজের ভিসা নিয়ে জাপানে যাচ্ছে কারণ এখানে কর্মীর চাহিদা অনেক বেশি তবে কিছু নির্দিষ্ট কিছু খাতে এই চাহিদা অনেক বেশি, এখন আমরা জানবো জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং এসব কাজে জাপানে গেলে কেমন বেতন পেতে পারেন।

জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি

জাপানের মতো উন্নত দেশে কাজের চাহিদা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কেন? এর কারণ হলো জাপানের জনসংখা, জাপানের জনসংখার বেশি ভাগ হচ্ছে বৃদ্ধ তাই বিভিন্ন ধরনের কোম্পানীর অনেক কর্মীর চাহিদা জাপানের মানুষের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না তাই বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানী তাদের কর্মীর চাহিদা পূরণ করছে, তবে বেশ কিছু খাতে এই চাহিদা দীগুণ।

যেমন: ইলেকট্রিশিয়ান, কনস্ট্রাকশন, মেকানিক, কম্পিউটার অপারেটর, নার্সিং, ফুড প্যাকেজিং, ফ্যাক্টরি, কৃষি।  

আরও পড়ুন: সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এবং কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন

জাপানে কনস্ট্রাকশন কাজের চাহিদা

জাপানে কনস্ট্রাকশন কাজে কর্মীর চাহিদা বেশ উচ্চ। জাপানের বার্ধক্য জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যা কমার কারণে দেশটি বিদেশি শ্রমিকদের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। জাপানে আধুনিক ভবন ও স্থাপত্য তৈরির ক্ষেত্রে এ পেশার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কনস্ট্রাকশন এর মধ্যে  চাহিদা বেশি হচ্ছে কাঠমিস্ত্রি, রডবাইন্ডার, ওয়েল্ডার, প্লাম্বার কাজের। 

নির্মাণ খাতে কাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে, যেমন টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ এবং স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (SSW) ভিসা।

জাপানে এই কাজের বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে যেমন একজন কনস্ট্রাকশন কর্মী জাপানে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারে। 

জাপানে ইলেকট্রিশিয়ান কাজের চাহিদা

জাপানে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করার জন্য স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (SSW) ভিসার মাধ্যমে আবেদন করা যায়। এছাড়া টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমেও এই ধরনের কাজে জাপানে যাওয়া যায়। জাপানে কনস্ট্রাকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, এবং টেকনোলজি সেক্টরে ইলেকট্রিশিয়ানদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্প এবং কারখানাগুলোতে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানদের প্রয়োজন হয়।

কেন ইলেকট্রিশিয়ানদের চাহিদা বেশি? নতুন ভবন নির্মাণ, রেললাইন, সেতু নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইন্সটলেশনের এর জন্য ইলেকট্রিশিয়ানদের প্রয়োজন হয়।

এই কাজে বেতন সম্পর্কে বলতে গেলে একজন অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান প্রতিমাসে ৩ লক্ষ টাকার উপরে বেতন পেতে পারে।

আরও পড়ুন: জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত? এবং সবচেয়ে বেশি বেতনের ৪ টি কাজ

জাপানে নার্সিং কাজের চাহিদা

জাপানে বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন ও সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিবছর অনেক নার্স এবং কেয়ারগিভারের প্রয়োজন হয় তাই জাপানে নার্সিং কাজের চাহিদা অত্যন্ত বেশি।  জাপানে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক উন্নত, এবং সরকার এই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে এর ফলে দিন দিন উচ্চ বেতনে নার্সিং কাজের চয়দাও বাড়ছে। 

এই কাজে বেতন বোনাস অনেক বেশি আপনি সহজেই ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বেতন পেতে পারেন। 

জাপানে ফুড প্যাকেজিং কাজের চাহিদা

 জাপান একটি শিল্পোন্নত দেশ, যেখানে খাদ্য উৎপাদন ও প্যাকেজিং একটি বড় সেক্টর। জাপানে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন সুশি, বেন্টো বক্স, প্যাকেটজাত নুডলস, এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবারের চাহিদা অনেক। ফলে এই ধরনের পণ্য তৈরি ও প্যাকেজিং করার জন্য শ্রমিকদের প্রয়োজন হয়। ফুড প্যাকেজিং কাজের জন্য সাধারণত খুব উচ্চমানের দক্ষতা প্রয়োজন হয় না, তাই বিদেশি কর্মীরা সহজে এই কাজ করতে পারে। 

এইকাজের বেতন জাপানে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। 

জাপানে ফ্যাক্টরি কাজের চাহিদা

জাপানের উৎপাদন শিল্পের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের প্রয়োজন দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত, গাড়ি উৎপাদন, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, এবং প্যাকেজিংয়ের মতো শিল্পগুলোতে ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

এই কাজের জন্য তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন হয় না তবে জাপানি ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন এবং শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন, কারণ বেশিরভাগ ফ্যাক্টরি কাজ শারীরিক পরিশ্রমের হতে পারে।

এই কাজের বেতন জাপানে কমপক্ষে ২ লক্ষ হয়ে থাকে। 

জাপানে কৃষি কাজের চাহিদা

জাপান সরকার দেশীয় খাদ্য উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তাই জাপানে কৃষি কাজের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি, বিশেষ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কারণে দেশটির কৃষি খাতে জনশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। ফল ও সবজি চাষ, ধান উৎপাদন, ফুল চাষ এবং পশুপালন খাতে কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা বেশি।

জাপানে কৃষি কাজের বেতন প্রতি ঘণ্টা হিসেবে হয়ে থাকে আপনি জাপানে এই কাজের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৯০০ থেকে ১২০০ ইয়েন পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।

আরও পড়ুন: জাপানি ভাষা শেখার সহজ উপায়

জাপানে থাকা খাওয়ার খরচ কেমন?

জাপানকে সাধারণত একটি ব্যয়বহুল দেশ হিসেবে ধরা হয়, বিশেষ করে টোকিও, ওসাকা এবং কিয়োতোর মতো বড় শহরগুলোর ক্ষেত্রে। তবে ছোট শহর বা গ্রামীণ এলাকায় খরচ তুলনামূলকভাবে কম। তবে জাপানে থাকাখাওয়ার খরচ শহর এবং জীবনযাত্রার মান এর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

যেমন আপনি যদি টোকিও, ওসাকার মতো বড় শহরে বসবাস করেন তাহলে ১ রুমের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ ইয়েন হতে পারে। এবং গ্রামীণ এলাকায় বা ছোট কোন শহরে বসবাস করেন তাহলে এই ভাড়া হবে ২০,০০০ থকে ৪০,০০০ ইয়েন। এর সাঠেক গ্যাস বিল, পানি বিল, যুক্ত হবে। 

খাওয়া খরচ এর হিসাব করতে গেলে একজনের জন্য প্রতিমাসে বড় শহরে ৩০,০০০ ইয়েন এবং গ্রামীণ এলাকায় ২০,০০০ ইয়েন প্রয়োজন হবে। 

এক কোথায় জাপানে থাকা খাওয়ার খরচ বড় শহরে ৬০,০০০ ইয়েন এবং বড় গ্রামীণ এলাকায় ৪০,০০০ ইয়েন প্রয়োজন হবে। 

জাপানে সর্বোচ্চ বেতন কত?

জাপানে সর্বোচ্চ বেতন বিভিন্ন পেশা, শিল্পখাত, কর্মক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়। সাধারণত, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং ম্যানেজমেন্টের উচ্চ পর্যায়ের পদগুলোতে সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া যায়।

এর হিসাব করতে গেলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রতি বছর প্রায় ¥6,000,000 – ¥10,000,000 ইয়েন পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। 

জাপানে কাজের ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়?

জাপানের কাজের ভিসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটি জাপানি কোম্পানির কাছ থেকে চাকরির অফার পেতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগ করে থাকে। আপনি অনলাইন জব পোর্টাল (যেমন GaijinPot, Jobs in Japan, Daijob) এর মাধ্যমে জাপানে কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কোম্পানীর কাছ থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর কোম্পানী আপনার জন্য Certificate of Eligibility (COE) এর আবেদন করবেন, COE পাওয়ার পর বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানি দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি ভিসা আবেদন সফল হয় তবে দূতাবাস থেকে আপনার পাসপোর্টে কাজের ভিসা লাগানো হবে। এটি প্রায় ৫-১০ কার্যদিবসের মধ্যে ইস্যু করা হয়।

আরও পড়ুন: জাপান যেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জাপানে যেতে কত টাকা লাগে

শেষ কথা: আজকে আপনাদের জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি, জাপানে থাকা খাওয়ার খরচ কেমন, এবং কাজের বেতন সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আর আপনার যদি আরও কোনো কিছু জানার প্রশ্ন থাকে তাহলে করুন অথবা ইনবক্স করতে পারেন FujiTechBD ফেসবুক পেজে।

FAQ

বাংলাদেশ থেকে জাপান যেতে কত সময় লাগে?

ঢাকা থেকে টোকিওতে সরাসরি ফ্লাইটে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এবং ট্রানজিট থাকলে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

রিলেটেড পোস্ট
জাপান যেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জাপানে যেতে কত টাকা লাগে
জাপান যেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জাপানে যেতে কত টাকা লাগে

জাপান যেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাপানে যেতে কত টাকা লাগে,জাপানে যাওয়ার উপায়,জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত,জাপানে কাজের ভিসা,জাপান ভিসা আবেদন সম্পর্কে জানতে Read more

জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত? এবং সবচেয়ে বেশি বেতনের ৪ টি কাজ
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত

জাপান যেতে চাচ্ছেন? কাজ বা পড়াশোনা যেজন্যই জাপানে যান না কেন টাকা ইনকামই হচ্ছে মূল লক্ষ, যাবার পরেই জাপানে সর্বনিম্ন Read more

জাপানি ভাষা শেখার সহজ উপায়
জাপানি ভাষা শেখার সহজ উপায়

জাপান যাবেন? তাহলে জেনে নিন জাপানি ভাষা শেখার সহজ উপায় কাজ অথবা পড়াশোনার জন্য জাপানে যেতে হলে সর্বপ্রথম আপানকে জাপানি Read more

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়
সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় হচ্ছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণব্যুরো (বিএমইটি) এবং International Manpower Development organization(IM Japan) এর উদ্যোগে নির্দিষ্ট কিছু Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *