মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করতে তা নাজানার কারণে অনেকই অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালান যা আইনগত অপরাধ এবং জরিমানার কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার নিয়ম এবং এটি করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে জানলে সহজেই নিজে নিজে লাইসেন্স করতে পারবো তাই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত এবং অনলাইনে কিভাবে সহজ নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করা যায়।
মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত আইনসম্মতভাবে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি প্রদান করে। এটি চালকের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য পথচারীদের সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে আপনি অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন বলে গণ্য হবে, যা আইনি ভাবে শাস্তিযোগ্যঅপরাধ । এছাড়া, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রমাণ করে যে আপনি সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করেছেন।
এই পোস্ট এর সূচিপত্র, যেখান থেকে পড়তে চান সেটার উপরে ক্লিক করুন।
মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সকল ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করব।
- যোগ্যতা নিশ্চিত করা: ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে প্রথমত আপনার যোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এজন্য আপনার বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হবে, এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন অষ্টম পাশ হতে হবে আপনার এই যোগ্যতা থাকলে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন।
- প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র: দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে যেমন: জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের ফটোকপি, চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র। আবেদন এর সময় এসব নথি প্রয়োজন হবে।
- লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা: আপনার যদি বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সব ঠিক থাকে ঠাহলে আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য লার্নার বা শিক্ষানবিস লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে এই শিক্ষানবিস লাইসেন্স মূলত আপনি যখন ড্রাইভিং পশিক্ষণ করার সময় ব্যাবহার করতে পারবেন। এটি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) এর ওয়েবসাইট (https://bsp.brta.gov.bd/) এ গিয়ে অনলাইনে ফর্ম পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আপলোড করে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার সময় লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৩৪৫ টাকা টাকা অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত পেতে ২ থেক ৩ কার্য দিবস সময় লাগতে পারে এবং এটি ৬ মাসের জন্য ইস্যু করা হয়। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে পূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ড্রাইভিং পরীক্ষা দিতে হবে। এই লাইসেন্স পাওয়ার পর আপনি প্রশিক্ষণ নিতে এবং মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালানোর অনুশীলন করতে পারবেন, তবে একজন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে চালাতে হবে।
- প্রশিক্ষণ: লার্নার বা শিক্ষানবিস লাইসেন্স পাওয়ার পরে আপনি এটি ব্যাবহার করে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন অথবা নিজের মোটরসাইকেল থাকলে বাসায় নিজে নিজে প্রাকটিস করতে পারেন।
- পরীক্ষা: মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষার দিন আপনার নির্ধারিত দিনে BRTA অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন লার্নার লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। এই পরীক্ষাগুলো সফলভাবে উত্তীর্ণ হলে আপনি পূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য লিখিত, প্র্যাকটিক্যাল ড্রাইভিং পরীক্ষা, এবং মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন (MCQ) দিয়ে থাকে যেমন: ট্রাফিক নিয়ম, সড়ক চিহ্ন, ট্রাফিক সিগন্যাল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ড্রাইভিং সম্পর্কিত প্রশ্ন। এবং মৌখিক পরীক্ষায় আপনাকে কিছু ট্রাফিক নিয়ম-কানুন ও ড্রাইভিং সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। আর প্র্যাকটিক্যাল ড্রাইভিং পরীক্ষায় আপনার মোটরসাইকেল চালানোর দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে এবং সঠিকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, ব্রেকিং, টার্নিং, সিগন্যাল ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আপনার দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে।
- লাইসেন্স সংগ্রহ: লিখিত, মৌখিক এবং প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং নির্ধারিত ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি- ২৮০৫ টাকা ইন্টারনেট অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন সম্পূর্ণ করতে হবে, আবেদন সম্পূর্ণ করার ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে BRTA অফিস থেকে আপনার মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা পোস্ট এর মাধ্যমে আপনার ঠিকানায় পৌছে যাবে।
brta ওয়েবসাইট এ লগইন করে এভাবে দেখতে পাবেন।
আরও পড়ুন: ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত দিন লাগে
মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত
মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তিক ফি নির্ধারন করা আছে তবে এই ফি দুই ভাগে দিতে হয় প্রথমটি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় এবং দ্বিতীয়টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে প্রদান করতে হয়। এই ফি সমূহ অনলাইন ব্যাংকিং এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোনো সময় পরিশোধ করা যায়, নিম্নে মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত তা আলোচনা করা হল।
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি:
১. শুধুমাত্র মোটরসাইকেল অথবা হালকা মোটরযান অর্থাৎ যে কোনো এক ধরণের মোটরযান এর জন্য ৩৪৫ টাকা
২. মোটরসাইকেল এবং হালকা মোটরযান একসাথে অর্থাৎ মোটরসাইকেলের সাথে যে কোনো এক ধরণের মোটরযান এর জন্য ৫১৮ টাকা।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি :
১. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ১৬৮০/-টাকা (০৫ বছরের)
২. অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২৫৪২টাকা (১০ বছরের)
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি
আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নবায়ন করা যাবে, তবে অতিরিক্ত জরিমানা ফি প্রযোজ্য হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য পুরানো ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে BRTA-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার পর আপনাকে একটি রিসিপ্ট দেওয়া হবে, যা আপনাকে নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর লাইসেন্স সংগ্রহ করতে কাজে লাগবে। নিম্নে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি কত তা উল্লেখ করা হল।
১. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি – মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫ টাকা।
২. অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি – মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭ টাকা।
আরও পড়ুন: অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম
তবে, পেশাদার ও অপেশাদার উভয় ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পার হলে প্রতি বছরের জন্য ২৩০ টাকা হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি জমা দেওয়ার জন্য দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: অনলাইন পেমেন্ট এবং অফলাইন পেমেন্ট। নিচে উভয় পদ্ধতির ধাপগুলো বর্ণনা করা হলো:
১. অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি:
- BRTA-এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেমেন্ট এর মাধ্যমে পেমেন্ট: এ জন্য প্রথমে BRTA-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন এবং আপনার মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন করে Payment অপশন এ যান। ফি প্রদানের জন্য পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করুন এবং মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ), ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপলব্ধ পেমেন্ট মেথডের মাধ্যমে ফি প্রদান করুন। সফল পেমেন্টের পর একটি রসিদ পাবেন, যা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
- মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে পেমেন্ট: মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ (বিকাশ, রকেট, নগদ) ওপেন করুন। পেমেন্ট মেনুতে যান এবং “BRTA” বা “Government Fee” নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন (যেমন: রেফারেন্স নম্বর, ফি অ্যামাউন্ট) এবং পেমেন্ট সম্পন্ন করুন এবং নিশ্চিতকরণ রসিদ সংরক্ষণ করুন।
২. অফলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি:
অফলাইন পেমেন্ট বলতে ব্যাংকে সরাসরি পেমেন্ট করা এজন্য আপনাকে নিকটস্থ ব্যাংকে যান। মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য নির্ধারিত ফি’র জন্য ব্যাংকের নির্ধারিত চালান ফরম পূরণ করুন এবং ব্যাংকে নির্ধারিত কাউন্টারে ফি জমা দিন। জমা দেওয়া চালানের একটি রসিদ পাবেন, যা BRTA অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রদান করবেন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি জমা দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এবং কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন
উপসংহার: আপনি যদি মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত এসম্পর্কে জানেন এবং সঠিক ভাবে আবেদন করতে পারেন তাহলে কোন ঝামেলা ছড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। যাইহোক, আজকে আপনাদের মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কত, মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। এই পোস্ট থেকে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করুন, আর আপনার যদি আরও কোনো কিছু জানার প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ ড্রাইভিং লাইসেন্স হেল্প সেন্টার এ যুক্ত হতে পারেন অথবা ইনবক্স করতে পারেন FujiTechBD ফেসবুক পেজে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এ কত টাকা জমা দিতে হয়?
১০ বছর মেয়াদী অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ৪,৪৯৭ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদী পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ২,৭৭২ টাকা জমা দিতে হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে বয়স কত লাগে ?
প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চালানোর জন্য: ১৮ বছর।
পাবলিক পরিবহন বা হেভি ভেহিকেল (যেমন বাস, ট্রাক) চালানোর জন্য ২১ বছর।
এই বয়সের নিচে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগে?
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ প্রয়োজন।